ধরা যাক কোনো দ্রাবকে একটি দ্রব দ্রবীভূত আছে। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যদি এক মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ দ্রবণকে মোলার দ্রবণ বলে বা এক মোলার প্রবণ বলা হয়। 1 লিটার প্রবলে যদি 2 মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ প্রবণকে 2 মোলার প্রবণ বলা হয়।
শ্রাবক, দ্রব ও প্রবণ বলতে কী বোঝায় সেটি বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। একটি গ্লাসে প্রায় অর্ধেক পানি নাও। সেই পানিতে সামান্য পরিমাণ খাবার লবণ নিয়ে একটি চামচ দিয়ে মেশাও। দেখা গেল পানিতে লবণ মিশে গেছে বা পানিতে আর লবণ দেখা যাচ্ছে না। এই লবণ পানির মিশ্রণ একটি প্রবণ। এই মিশ্রণে পানিকে বলা হয় শ্রাবক এবং লবণকে বলা হয় প্ৰব। প্ৰবণ প্রস্তুত করার সময় পানি, এসিড, অ্যালকোহল ইত্যাদি নানা রকম তরল ব্যবহার করা যায়। এই অধ্যায়ে আমরা মূলত পানিকে দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করব। পানিকে দ্রাবক হিসাবে ব্যবহার করলে যে প্রবণ তৈরি হয় তাকে জলীয় দ্রবণ বলে।
দ্রবণ = দ্রব + দ্রাবক
তোমরা মাঝে মাঝেই লঘু দ্রবণ এবং গাঢ় জল কথাগুলো শুনবে। তুমি যদি একটি গ্লাসে 250 মিলিলিটার পানির মধ্যে 10 গ্রাম খাবার লবণ মিশাও তাহলে একটি প্রবণ তৈরি হবে। তুমি যদি আরেকটি গ্লাসে 250 মিলিলিটার পানির মধ্যে 15 গ্রাম খাবার লবণ মিশাও তাহলেও একটি দ্রবণ তৈরি হবে। এই দুটি দ্রবণের মধ্যে একটি লঘু প্রবণ এবং অন্যটি গাঢ় প্রবণ। যে দ্রবণে খাবার লবণ কম সেই দ্রবণটি লঘু প্রবণ আর যে দ্রবণে খাবার লবণ বেশি সেই দ্রবণটি গাঢ় দ্রবণ। আবার একটি গ্লাসে 250ml পানি এবং অপর একটি গ্লাসে 200 ml পানি নেওয়া হলো। এবারে দুটি গ্লাসেই 10g লবণ মেশানো হয়েছে। এখন বলতে পারবে কোন পাত্রের দ্রবণটি লঘু এবং কোন পাত্রের দ্রবণ পাঢ়? যে পাত্রে পানির পরিমাণ বেশি সেটি লঘু প্রবণ আর যে পাত্রে পানির পরিমাণ কম সেটি গাঢ় প্রবণ। ল্যাবরেটরিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকের মধ্যে কম পরিমাণ দ্রব মিশ্রিত করলে তাকে লঘু দ্রবণ বলে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকের মধ্যে বেশি পরিমাণ দ্রব মিশ্রিত করলে তাকে গাঢ় দ্রবণ বলে। আসলে দ্রাবকের মধ্যে কতোটুকু পদার্থ যোগ করলে সেই দ্রবণ লঘু হবে আর কতোটুকু পদার্থ যোগ করলে দ্রবণ গাঢ় হবে তার কোনো নিয়ম নেই। অর্থাৎ দ্রাবকের মধ্যে তুলনামূলক কম পরিমাণ দ্রব থাকলে তাহলে সেটা লঘু দ্রবণ এবং দ্রাবকের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে দ্রব থাকলে সেটা গাঢ় দ্রবণ।
একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যত মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তাকে ঐ দ্রবণের মোলারিটি বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যদি দুই মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ দ্রবণের মোলারিটি দুই। যদি 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে 0.5 মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তাহলে ঐ দ্রবণকে সেমিমোলার দ্রবণ বলে এবং 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যদি 0.1 মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ দ্রবণকে ডেসিমোলার দ্রবণ বলে এবং ডেসিমোলার দ্রবণের মোলারিটি = 0.1। সেমিমোলার দ্রবণের মোলারিটি হবে 0.5 ।
বিভিন্ন মোলারিটির দ্রবণ প্রস্তুতকরণ
ল্যাবরেটরিতে মোলার দ্রবণ, ডেসিমোলার দ্রবণ, সেমিমোলার দ্রবণ ইত্যাদি প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয় । বিভিন্ন মোলারিটির দ্রবণ প্রস্তুত করা অত্যন্ত সহজ। এক্ষেত্রে তোমাকে কতোগুলো কাজ ধাপে ধাপে করতে হবে। প্রথমত তোমাকে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের আয়তনিক ফ্লাস্ক বাছাই করতে হবে। দ্বিতীয়ত যে পদার্থের দ্রবণ তৈরি করতে হবে সেই পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন করে নিয়ে আয়তনিক ফ্লাস্কে ঢেলে নিতে হবে। তৃতীয়ত আয়তনিক ফ্লাস্কের মধ্যে খানিকটা পানি যোগ করে ঝাঁকিয়ে পদার্থটির দ্রবণ তৈরি করতে হবে। তারপর সাবধানে আয়তনিক ফ্লাস্ক এর নির্দিষ্ট দাগ পর্যন্ত পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। দ্রবণের মোলারিটি, দ্রবণের আয়তন, দ্রবের ভর এবং দ্রবের আণবিক ভরের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে।
গ্রাম এককে দ্রবের ভর = দ্রবণের মোলারিটি x মিলিলিটার এককে দ্রবণের আয়তন x দ্রবের আণবিক ভর / 1000
এখানে গ্রাম এককে দ্রবের ভর = w
দ্রবণের মোলারিটি = s
মিলিলিটার এককে দ্রবণের আয়তন = V
এবং দ্রবের আণবিক ভর = M ধরে নিলে
W = SVM / 1000
মোলারিটি বা ঘনমাত্রা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য এই সূত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
Read more